ঢাকেশ্বরীর অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন: পূজা উদযাপন পরিষদ

প্রায় ছয় দশক ধরে মন্দিরের দেবোত্তর ভূমি বেদখলের কারণে ঢাকেশ্বরীর অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন হয়েছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ।

শুক্রবার সকালে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে প্রতীকী অনশন কর্মসূচি থেকে ক্ষোভ জানিয়ে নেতারা বলেছেন, ঢাকেশ্বরী মন্দিরের ২০ বিঘা দেবোত্তর ভূমির মধ্যে প্রায় ১৪ বিঘা ‘বেদখল’ হয়ে গেছে।

প্রতিবাদী প্রতীকী অনশন কর্মসূচিতে অংশ নেন সাংসদ পঙ্কজ দেবনাথ, ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি ডি এন চ্যাটার্জি, সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার রায়, প্রাক্তণ সভাপতি স্বপন কুমার সাহাসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।

ডি এন চ্যাটার্জি বলেন, “১৯৬৪ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, ১৯৬৫ এর পাক ভারত যুদ্ধ ও স্বাধীনতাউত্তর কালে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের বৃহদাংশ দেবোত্তর ভূমির দিকে স্বার্থান্বেষী ভূমিদস্যুদের চোখ পড়েছে। অসাধু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে জালিয়াতির মাধ্যমে ভূমির ভূয়া কাগজপত্র তৈরি করে রেকর্ডভুক্ত করে।”

মন্দিরের সরু প্রবেশ পথের পশ্চিম পাশে দেবোত্তর ভূমি ‘জবরদখল’ করে বস্তি ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণ চলছে বলে এসময় তিনি অভিযোগ করেন।

ভূমি পুনরুদ্ধারে কয়েক দশক ধরে মোকাদ্দমা চালানো হলেও আজ পর্যন্ত কোনো ‘সুরাহা হয়নি’ বলেও হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।

“প্রায় ২০ বিঘা দেবোত্তর ভূমির মধ্যে বেদখলকৃত প্রায় ১৪ বিঘা পরিমাণ ভূমি বর্তমানে আজম, মমিন মোটরস লি., বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, নাভানা রিয়েল এস্টেট, গফুর গং, অ্যাডভোকেট কামাল, জিন্নাহ্ ও আজিম গং অন্যান্যদের দখলে বিদ্যমান। ১৪ বিঘা ভূমি পুনরুদ্ধারে কয়েক দশক ধরে মামলা-মোকাদ্দমা চালানো হলেও আজ পর্যন্ত তার কোনো সুরাহা হয়নি।”

এসময় আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “এতে শুধু মন্দিরের পবিত্রতাই নষ্ট করা হয়নি, একইসঙ্গে মন্দিরে আগত ভক্ত-পর্যটক, সরকার ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তাও ক্ষুণ্ন হচ্ছে।”

সংগঠনের এক প্রচারপত্রে বলা হয়েছে, প্রায় ৮০০ বছর আগে ঢাকেশ্বরী মন্দির স্থাপিত হয়। মহারাজা মানসিংয়ের সময় প্রায় ৫০০ বছর আগে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের সংস্কার হয়। সে সময় মূল মন্দিরের পাশে ৪টি শিবমন্দির স্থাপন।

ভাওয়ালের রাজা রাজেন্দ্র নারায়ণ রায় বাহাদুরের আমলে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের জন্য ২০ বিঘা ভূমি সরকারের ২১৬৮ নং খাতভুক্ত মহালে দেবোত্তর ভূমি হিসেবে রেকর্ডভুক্ত হয়। পরে ১৯০৮ সালে তার ছেলেরা এক দলিল নিবন্ধনের সময় সিদ্ধান্ত নেন, উত্তরাধিকার হিসেবে তারা বা সেবায়েত বা উত্তরাধিকার শুধুমাত্র ভোগ দখলের অধিকার ব্যতীত সম্পত্তি বিক্রয় বা হস্তান্তর করতে পারবে না।

পূর্ববঙ্গে সরকারের আনুষ্ঠানিক ভূমি জরিপ শুরু হলে বাংলাদেশ সরকারের আমলে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের সমুদয় দেবোত্তর ভূমি হিসেবে ঢাকা মৌজার সিএস ৩০ থেকে ৪৩ নং দাগে রেকর্ডভুক্ত হয়। নকশায় স্পষ্ট করে পাকা পিলারসহ চৌহদ্দিকৃত হয়। পরে পাকিস্তান আমলে এস এ জরিপে লালবাগ মৌজার ৯৪ থেকে ১১৭ দাগে রেকর্ডভুক্ত হয়।

News Link : https://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article1471779.bdnews